এই বিশাল বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতবর্ষের মেল বন্ধন ঘটাতে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। সেই রকমই ঐতিহ্যপূর্ণ কয়েকটি সেতুর কথা আমরা এখানে আলোচনা করব যেগুলি নির্মাণকলার জন্য আমাদের দেশের নাম সারা বিশ্বে উজ্জল করেছে। আর সব থেকে আশ্চর্যের কথা এই সেতুগুলির বেশির ভাগ ই তৈরি হয়েছিল সুদুর অতীতে, যখন আমাদের প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না।
আসুন, সময়ের পরীক্ষায়ে সগর্বে উত্তীর্ণ এই সব সেতুগুলির সম্পর্কে কিছু কথা জানি।
- নাইনি সেতু, এলাহাবাদ
পুরাতন নাইনি সেতু, এলাহাবাদ
ভারতীয় রেল ইতিহাসের বহু বর্ণময় দৃশ্যপটের সাক্ষী এই ঐতিহাসিক নাইনি সেতু। ১৮৬৫ সনের ১৫ই অগাস্ট এই সেতু জন সাধারনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। নিউ দিল্লি এবং হাওড়ার যাত্রাপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল এই সেতু। নাইনি সেতুর সব থেকে আশ্চর্যজনক বিষয় হল এর অনন্য স্থাপত্য।এই সেতু দাঁড়িয়ে আছে ১৩টি হাতির পা এর মতন দেখতে স্থম্ভএর ওপর।
নতুন নাইনি সেতু, এলাহাবাদ
নতুন নাইনি সেতু ভারতবর্ষের সব থেকে পুরনো ও দীর্ঘ সেতুর মধ্যে একটি।যমুনা নদীর ওপর অবস্থিত এই সেতু সুধু রেল নয় যানবাহন চলাচলের জন্যে ও ব্যবহৃত হয়। ১৯২৭ সাল থেকে সক্রিয় দ্বিতল এই সেতুর ওপর পাটাতন রেল চলাচল এবং নিম্নভাগ যান চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- নর্মদা সেতু, আঙ্কালেশ্বার – ভারুছ, গুজরাত
১৩৫ বছর ধরে প্রকৃতির বিপর্যয় সহ্য করে নর্মদা সেতু আঙ্কালেশ্বার এবং ভারুছকে সংযুক্ত করে আসছে। কথিত আছে যে, এই সেতু তৈরি করতে এত খরচ হয়েছিল যাতে কিনা এটি সোনা দিয়ে ও নির্মাণ করা যেত। এটি শুধু দুটি শহরকেই যুক্ত করেনি, নর্মদা নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দূর দূরান্তর থেকে বহু মানুষ এই সেতুতে আসেন।
- পাম্বান সেতু, রামেশ্বারাম
পাম্বান সেতু, ভারতবর্ষের প্রথম সমুদ্রের ওপর দিয়ে যাওয়া সেতু। এই ঐতিহাসিক সেতু পাম্বানকে মূল ভারতীয় ভুভাগের সাথে যুক্ত করে। ১৯১৩ সালে এই সেতুর উদ্বোধন হয়। ২ কিমি বিস্তৃত পাম্বান সেতুতে ১৪৩টি জেটি আছে।
- রবীন্দ্র সেতু, কলকাতা
রবীন্দ্র সেতু বা হাওড়া ব্রিজ ১৯৪৩ সাল থেকে কলকাতার প্রতীক হয়ে আসছে। হুঘলী নদীর ওপরে অবস্থিত এই সেতু দিয়ে রোজ ১৫০,০০০ পথচারী এবং ১০০,০০০ যানবাহনএর নিত্য যাতায়াত এটিকে বিশ্বের ব্যস্ততম কান্তিলিভার সেতুর মর্যাদা দিয়েছে।
- সরাইঘাট সেতু, গৌহাটি
১৯৬০ সালে তৈরি ব্রমহপুত্র নদীর ওপর সরাইঘাট সেতু শুধু মাত্র উত্তর পূর্ব ভারতের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ স্থাপন করছে না, উঃ-পু ভারতের সাতটি রাজ্য গুলির নিজেদের মধ্যেও সুসম্পর্ক মজবুত করছে। আসাম এর মানুষদের দীর্ঘ লড়াই এর পর এই রেল তথা যানবাহন যাতায়াতযোগ্য সেতু ৫৪ বছর আগে নির্মিত হয়। ব্রমহপুত্র নদের ওপর নির্মিত প্রথম সেতু হিসেবে এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী জাওহারলাল নেহেরু।
- লক্ষণ ঝুলা সেতু, হৃষীকেশ, উত্তারাখানড
এই লৌহ নির্মিত ঝুলন্ত সেতু ১৯৩৯ সালে তৈরি হয়েছিল। কথিত আছে, শ্রী রাম চন্দ্রের ভাই লক্ষণ গঙ্গার ওপরে এই জায়গা দিয়ে পাটের তৈরি দড়ি দিয়ে সেতু বানিয়ে পার করেছিলেন। লক্ষণ ঝুলা সেতু থেকে গঙ্গা নদীর অতি মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এই সেতুর কিছু দূরেই কেদারনাথ এবং বদ্রিনাথ যাওয়ার পুরনো পথের হদিশ পাওয়া যায়।