চার ধাম যাত্রার সুযোগ জীবনে একবার আসে। এই যাত্রার পথ একইসঙ্গে দীর্ঘ, কঠিন এবং শেষপর্যন্ত লক্ষ্যপূরণ হলে একটি বড় প্রাপ্তিও! হরিদ্বার হচ্ছে রেল স্টেশন। মানুষ হরিদ্বার থেকেই যায় যমুনোত্রী। সেখানে পবিত্র যমুনা নদীতে ডুব দিয়ে শুরু হয় ভ্রমণার্থীদের তীর্থযাত্রা। প্রথমে গঙ্গোত্রী। তারপর সেখান থেকে কেদারনাথ। সর্বশেষে বদ্রীনাথ। পথে পড়ে অজস্র বিখ্যাত মন্দির। সেই মন্দিরগুলোতে পুজো দেন মানুষ। আর যাত্রাপথে রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তার মধ্যে রয়েছে নিজের মন আর শরীরকে পরিশোধন করে নেওয়ার সুযোগ।
প্রথম ধাম: গঙ্গোত্রী
গঙ্গোত্রীর অবস্থান উত্তরকাশী জেলায়। গঙ্গোত্রী অঞ্চলের বৈশিষ্ঠ্য চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সবুজ আর বিশুদ্ধ জল। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী গঙ্গোত্রীই উৎস গঙ্গা নদীর। গঙ্গোত্রীর জল চলে গিয়েছে চার ধামের পরের দু’টি শহর, প্রথমে বদ্রীনাথ, তারপর কেদারনাথে। গঙ্গোত্রীতে আপনি দেখবেন গঙ্গোত্রী মন্দির, উষ্ণ প্রস্রবন গাঙনানি। যে জলে রয়েছে গন্ধক। আপনার ব্যথ, বেদনা উপশম হওয়ার উপাদান। আর রয়েছে জলে ডুবে থাকা শিবলিঙ্গ। বলা হয় এখানেই পা রেখে গঙ্গা দেবীর প্রথম মর্ত্যে আগমন।
দ্বিতীয় ধাম: যমুনোত্রী
যমুনা নদীর কাছে নিবেদিত এই শহর। বলা হয় এখানেই কালিন্দী নামের এক পর্বত যমুনা নদীর উৎস। তীর্থযাত্রীরা যমুনোত্রী যাওয়ার জন্য জানকিচট্টি থেকে কম সময়ে পৌঁছতে পারেন। তবে সেই ক্লান্তিও কমানোর ব্যবস্থা আছে। টাট্টুতে অথবা পালকিতে চেপেও যমুনোত্রী যাওয়া যায়। যেভাবেই যাওয়া হোক না কেন, খরচ পড়ে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো (একজনের)। এখানে প্রধান মন্দির ছাড়াও দেখার বস্তু সুর্যকুণ্ড, সপ্তর্ষিকুণ্ড আর জানকিচট্টিও। ট্রেকিংয়ের অন্যতম জায়গা এই জানকিচট্টি।
তৃতীয় ধাম: কেদারনাথ
রুদ্রপ্রয়াগ থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরে, গুপ্তকাশী জেলায় অবস্থিত কেদারনাথ। একাধিক পাহাড় পেরিয়ে, কখনও চোখজুড়োনো সবুজ, কখনও উষ্ণ ঝরনার স্রোত আর সীমাহীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে দিয়ে কেদারনাথ পৌঁছনো যায়। বলা হয়, শিবের ১২টি জ্যোর্তিলিঙ্গের মধ্যে কেদারনাথ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে আপনি দেখবেন ভৈরব মন্দির, মহাপন্থ। তাদের ওপর রয়েছে সাতোপন্থ—যার সম্পর্কে বলা হয় স্বর্গে যাওয়ার প্রবেশদ্বার। এছাড়াও রয়েছে কেদারনাথ অভয়ারণ্য। এখানে বিভিন্নরকমের গাছপালা ও প্রাণীর অবস্থানের জন্যই এই অভয়ারণ্য।
কেদারনাথ দর্শনের জন্য রেজিস্ট্রেশন: কেদারনাথ যাত্রার আগে রেজিস্ট্রেশন (নথীভূক্ত করা নিজের নাম) ককরা আবশ্যিক। কাউন্টারে নিজে উপস্থিত থেকে নথীভূক্ত করানো যায় নিজের নাম। অথবা অনলাইনেও করাতে পারেন। আপনাকে দেওয়া হবে একটি ট্রিপ কার্ড। গোটা যাত্রায় যে কার্ড আপনাকে সঙ্গে রাখতে হবে।
মেডিক্যাল সার্টিফিকেট:গুপ্তকাশী বা শোনপ্রয়াগের মেডিক্যাল সেন্টার থেকে ডাক্তারের সার্টিফিকেট পাওয়ার পরই আপনি কেদারনাথ ভ্রমণে যেতে পারবেন। যদি সেই রিপোর্টে কোনও কঠিন অসুখের কথা বলা হয় সেক্ষেত্রে আপনার হেঁটে কেদারনাথ যাওয়া যাবে না। তবে হেলিকপ্টারেও আপনি এখন কেদারনাথে যেতে পারেন।
চতুর্থ ধাম: বদ্রীনাথ
গাড়োয়াল হিমালয়ের মধ্যে অবস্থিত এই পবিত্র শহর দর্শনেও আপনার প্রয়োজন বিশেষ অনুমতির। বদ্রীনাথের মন্দিরে পৌঁছনোর জন্য জোশীমঠ থেকে একটি গাড়ি ভা়ড়া করতে পারেন। কিন্তু গাড়িগুলোকে বদ্রীনাথ যেতে দেওয়া হয় একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (সকালে ৬-৭, ৯-১০, ১১-১২, দুপুরে ২-৩, বিকেলে ৪.৩০-৫.৩০)। এছাড়াও মন্দিরের ভেতরে ঢোকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তখন তিন নম্বর গেটে চলে যান। সেখানে বেদ পাঠ পুজোর জন্য ২৫০০ টাকার একটি স্লিপ কিনুন। তার ১৫ মিনিটের মধ্যে আপনি মন্দিরের ভেতর ঢুকে মুর্তি দর্শন করতে পারবেন। এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে। আর বন্ধ থাককে নভেম্বর থেকে।
চার ধাম যাত্রায় অবশ্য অংশ নিন। এই যাত্রা সমস্তদিক থেকে আকর্ষণীয়। সমস্তরকম উপাদান চার ধাম যাত্রায় রয়েছে। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ধর্মীয় গুরুত্ব এবং যাত্রাপথের অন্যান্য বিরল অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ।