লেখক: ভাগ্যশ্রী পাঞ্চলি
অনুবাদ : অন্বয় চক্রবর্তী
যখনই আসাম ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়ে গুটিকয়েক দর্শনেও স্থলের নাম উঠে আসে । আমরা সবাই জনি অসম দুটি জিনিসের জন্য বিখ্যেত – অসম চা ও দলমা হাতি ।তাই বেশিরভাগ পর্যন্তনকারী মানুষ তাদের অসম ভ্রমণ কেবল মাত্র কাজিরাঙা, পবিতরা বা আসামের চা বাগান দর্শন অবধিই সীমিত রাখেন । কিন্তু আপনি কি জানেন অসমে আরো অনেক সুদৃশ্য ও ঐতিহ্য মন্ডিত পর্যটনের স্থান আছে । চলুন কথা বলি এমনই এক ঐতিহাসিক জায়েগার ব্যাপারে ।
অহম রাজাদের রাজধানী শিবসাগর
আসামের এখনকার রাজধানী গুয়াহাটীর থেকে ৩৬০ কিমি দুরত্বে অবস্থিত, আপার আসামের সুদৃশ্য শহরটি “আসামের মন্দির শহর” হিসেবে বিখ্যেত । কিন্তু যারা আসামের ইতিহাসের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল তারা জানেন যে ৩০০ বছর ব্যাপী আহোম রাজত্বের সময় শিবসাগর ছিল তাদের রাজধানী । আহোম রাজাদের রাজ্যকালে এই শহরটি ছিল আসামের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র । এই শহর জুড়ে আহোম রাজাদের স্থাপত্য কৌশলের প্রচুর নমুনা ছড়িয়ে আছে । এমনই কিছু ভ্রমণ স্থানের ব্যাপারে নিচে পড়ুন :
রঙ্গঘর
আপনারা সকলেই ইতালির বিখ্যেত রোমান যুগের কলিসিয়ামের ব্যাপারে তো শুনেইছেন, কিন্তু আপনি কি জানেন ভারতবর্ষেও এমনি একটি স্থাপত্য আছে, এবং সেটি শিবসাগরে স্থিত । ভারতের এই এক মাত্র কলিসিয়াম বা এমফিথিয়েটারের নাম রঙ্গঘর । এমন শোনা যায় যে আহোম রাজারা তাদের পরিবার এবং কাছের লোকেদের নিয়ে এখানে আসামের পরম্পরাগত খেলা ধুলোর প্রদর্শনী দেখে নিজেদের বিনোদন করতেন । পুরাতন দিনে এই কোলিসিয়ামে পাখিদের যুদ্ধ, ষাঁড় নিয়ে খেলা দেখানো, ইত্যাদি রোমাঞ্চকর খেলার প্রদর্শনী হত । রঙ্গঘরের আরো এক অনন্য কৃতি হল : এই স্থাপত্যটি বড়া চাউল দ্বারা নির্মিতও হয়েছিল । সেই চালের দানা এখনো রঙ্গঘরের গায়ে দেখা যায় ।
চড়াইদেও পর্বত
নাগাল্যান্ডের সীমান্তে স্থিত এই পাহাড় এক দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্র । ১২৫৩ শালে, অহম রাজবংশের প্রথম রাজা – রাজা শুকাফা এই পর্বতের নির্মাণের নির্দেশ দেন । এই পর্বতের বৈশিষ্ট্য হলো এটি বিস্ত্রীত আহোম রাজা ও রানীদের ৪২টি কবর । প্রত্যেকটি কবর সুন্দর ভাবে ভাস্কর্য্যর দ্বারা সাজানো । পাহাড়ের চারিদিক বাগানে ভরা ।
নামদাং পাথর পুল
শিবসাগর থেকে ১২ কি মি দুরত্বে স্থিত, এই পুলটি ৩০০ বছরের অধিক পুরোনো । বলা হয়ে ১৭০৩ সালে রাজা রুদ্র সিংহ এই পুলের নির্মাণ করেন যাতে শিবসাগরের বাসিন্দারা সহজেই আসামের অন্য শহরে (ডিব্রূগড়, তিনসুখিয়া, ইত্যাদি) পৌঁছতে পারে । এই অসাধারণ পুলটি একটিমাত্র বিশাল পাথর দ্বারা নির্মিত, যে নামদাং পুল কে কিছু অনন্য প্রকৌশলের মধ্যে গণ্য করায়ে । আজ এই পুরাতন পুলটি আমাদের পরিবহন পরিকাঠামো হিসেবে এন. এহ. – ৩৭ এ অন্তর্ভুক্ত ।
শিব ঢল
এই সুন্দর মন্দিরটি বহু যুগ ধরে শিবসাগরে শিব উপাশনার প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন শিব ঢল বিশ্বের উচ্চতর মন্দিরের মধ্যে একটি । ১৮০ ফুট লম্বা এই মন্দিরটির নির্মাণ আহোম রানী অম্বিকার নির্দেশে ১৭৩৪ শালে হয়ে । এই বিশাল মন্দিরটি শিবসাগর শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে দেখা যায় । শিব ঢলের ভেতরের ভাস্কর্য্য ভগবান শিবের বিভিন্ন মূর্তি দ্বারা সুসজিত । এর পাশেই স্থিত বিষ্ণু এবং দেবী ঢল ।
কী, এবার পূজোয় হয়ে যাক মনোরম শিবসাগর ভ্রমণ ?