২০১৯-এ ভারতবর্ষের সেরা আকর্ষণ কী? সমস্ত রাস্তা যেদিকে যাবে সেই প্রয়াগরাজ! উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে। ১৫ জানুয়ারি থেকে ৪ মার্চ—এই শহরটা পূণ্যভূমিতে রূপান্তরিত হয়ে উঠবে। দেশের প্রত্যেক মানুষ, পূণ্যভূমিতে যান বা না যান, জানেন ‘কুম্ভের মেলা’র কাহিনী। প্রত্যেক মানুষ জানেন ত্রিবেণী সঙ্গমকে ঘিরে হওয়া এই বিশ্বজোড়া খ্যাতিসম্পন্ন মেলার কথা। মেলায় ভিড় এতটা হয় যে আপনি পথ হারিয়ে ফেলতে পারেন! এবছর এলাহাবাদ আয়োজন করছে অর্ধ কুম্ভমেলার! প্রত্যেক ৬ বছরে যা ফিরে আসে। সুতরাং এটা প্রত্যাশিত লক্ষ লক্ষ হিন্দু পূণ্যার্থী এবার এলাহাবাদ যাবেন মেলার বিশেষ পর্বে অংশ নেওার জন্য। মানুষের অংশ নেওয়ার পরিসংখ্যানে কুম্ভ মেলার কীর্তি আছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পূণ্যার্থীর উপস্থিত থাকার কীর্তি। এবারও স্বাভাবিকভাবে আশা করা যাচ্ছে কুম্ভমেলা তার কীর্তি ধরে রাখবে। কিন্তু সেটাই কুম্ভমেলার একমাত্র ব্যতিক্রমী উপাদান নয়। আরও অবাক করার মতো তথ্য আছে কুম্ভমেলাকে ঘিরে। নীচে পড়ে জানুন।
১) পুরাণের কথা:
কুম্ভ শব্দের মানে অমৃতের (যার সাহায্যে অমরত্ব প্রাপ্তি হয়) পাত্র। কথিত যে, সমুদ্রমন্থনের সময় অমৃত ভরা একটি কুম্ভ আবিষ্কার করেন দেবতা ও রাক্ষসরা। দেবতাদের মধ্যে প্রভু ব্রক্ষ্মা সেই কুম্ভটি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাকে তাড়া করেন রাক্ষসরা। টানাটানিতে চার জায়গায় সেই কুম্ভ থেকে অমৃতের ফোঁটা পড়েছিল। এলাহাবাদ, ইন্দোর, নাসিক এবং হরিদ্বারে। তারপর থেকে এই চারটে শহরকে ‘কুম্ভমেলার’ পূণ্যভূমি বলা হয়।
আরও কাহিনী আছে। দুর্বাসা মুনি রেগে গিয়ে শাপ দিয়েছিলেন দেবতাদের। এতে দেবতাদের শক্তি কমে যায় এবং দেখা যায় পৃথিবীর বুকে অসুরদের দাপট। তখন ব্রক্ষ্মা দেবতাদের পরামর্শ দেন অমৃত মন্থন করার। তখন অসুরদের মনে হল তাহলে তো দেবতারা অমর হয়ে থাকবেন। তারপর ১২দিন ধরে দেবতাদের পেছনে অমৃতের জন্য তাড়া করার সময় চার জায়গায় অমৃতের ফোঁটা পড়েছিল বলে কথিত। আর অমৃতের নির্যাসটা, বলা হয় নদীতে রুপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা আর সরস্বতীর মিলনস্থলই সেই নদী বলে কথিত।
২. ইতিহাসে প্রথম উল্লেখ:
ইতিহাসের পাতায় কুম্ভমেলার প্রথমবার দেখা গিয়েছিল বিখ্যাত চিনা পর্যটক হিউ-এন-সাং-এর লেখায়! হর্ষবর্ধনের রাজত্বে যিনি ভারতে এসেছিলেন। তার লেখায় হিউ-এন-সাং উল্লেখ করেছিলেন হর্ষবর্ধনের উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল। প্রয়াগে দুটো নদীর সঙ্গমস্থলে। সেখানে শ’খানেক ভক্ত ডুব দিয়ে স্নান করেছিলেন।
৩. কখন আপনি কুম্ভমেলায় যাবেন?
কুম্ভমেলা কিছু নির্দিষ্ট দিনে হয়। যখন পবিত্র নদীগুলোর জল রূপান্তরিত হয় অমৃতে! তাই মহা কুম্ভমেলা হোক বা অর্ধ কুম্ভমেলাই হোক, আপনাকে যাওয়ার আগে সুর্য, চন্দ্র এবং বৃহস্পতির অবস্থান। সাধারণত এলাহাবাদে কুম্ভমেলা হয় মাঘ মাসে। যখন গ্রহগুলির অবস্থান সঠিক থাকে। সেই সময় প্রয়াগে পবিত্র নদীতে স্নান করলে বলা হয় সমস্ত পাপ ধোয়া হয়ে গেল। এবছর স্নানের পবিত্র দিন ১৪, ২৭ জানুয়ারি, ৬, ১৫, ১৭, ২১ ফেব্রুয়ারি।
৪. যন্ত্রনায় আস্থা
সাধারণত শীতের মাসে এই স্নান হয়। তখন উত্তর ভারতের নদীগুলোর জল জমে যাওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছে যায়। ওরকম প্রচণ্ড ঠাণ্ডা জলে ভোরবেলায় স্নান করার জন্য প্রয়োজন হয় যন্ত্রণা সহ্য করার মানসিক জোর। লক্ষাধিক ভক্ত কিন্তু সেটা হাসিমুখেই সহ্য করে জলে নামেন এবং স্নানও করেন। প্রথমন শাহী স্নান হয় মকর সংক্রান্তির দিন। আর স্নান করার শেষ দিন হবে এবছরের মার্চে। এর মধ্যে স্নান করা যাবে পূর্ণিমা, অমাবস্যা এবং বসন্ত পঞ্চমীর দিন।
৫. নাগা সাধুরা যখন জলে নামেন:
কুম্ভমেলাই একমাত্র মেলা যেখানে নাগা সাধুদের দেখা যায়। নাগা সাধুরা জীবনের সমস্ত বাস্তবিক সুখ, স্বাচ্ছন্দ বর্জন করে শিব দেবতার সাধনায় ডুবে থাকেন। তাদের সাধারণত জনসাধারণের সঙ্গে অন্য মেলায় দেখা যায় না। একমাত্র কুম্ভমেলায় তারা আসেন। দল বেঁধে জলে নেমে স্নান করেন। তাছাড়াও লাঠি, তরবারি দিয়ে নিজেদের গায়ে অবিরাম আঘাত করার খেলাও খেলতে দেখা যায় তাদের। তাদের জীবনদর্শন, মতামত সম্পর্কে আপনি জানতেও চাইতে পারেন। তারা আলোচনা করতে বিরক্ত বোধ করেন না। নাগা ছাড়াও আরও অনেক ধরনের হিন্দু ভক্তের সমাগম হয় কুম্ভে। যেমন কল্পাশিষ (এরা দিনে তিনবার স্নান করেন), উর্ধ্ববাহুরা (এরা জলের মধ্যে নানা অবস্থায় নিজেদের শরীরকে রাখতে পারেন)।
৬. বৃহত্তম সমাগম:
প্রত্যেকবার কুম্ভমেলা আয়োজিত হয়। মনে হয় প্রত্যেকবার মেলায় আসা মানুষের সংখ্যা আগের বারকে ছাড়িয়ে যাবে। পরিসংখ্যান সবসময় বলে পৃথিবীর বুকে শান্তিপূর্ণভাবে সর্বোচ্চ মানুষের সমাগম হয় এই মেলায়। ২০১৩-তে কুম্ভমেলায় আসা মানুষের সংখ্যা পৌঁছেছিল সর্বোচ্চ পরিমাণে। ১২ কোটি ভক্তের সমাগম হয়েছিল সেবার। এবার কি ম্যাজিক ফিগারও ছাড়িয়ে যাবে? সময়ই বলবে।
৭. হনুমান মন্দির দেখার সুযোগ
এলাহাবাদে কুম্ভমেলায় যাওয়া ভক্তদের কাছে একটা বড় আকর্ষণ হনুমান মন্দির দেখার। এটা ব্যাতিক্রমী একটি মন্দির যা বছরের বেশিরভাগ সময় গঙ্গায় ডুবে থাকে! পুরাণের কথা যে, গঙ্গা নদী হুনুমানের পা ছোঁয়ার জন্য নিজের জলের পরিমাণ বাড়িয়ে রাখেন। তাই মন্দির অধিকাংশ সময় ডুবে থাকে। তবে কুম্ভমেলার সময় এই মন্দির জল থেকে ভেসে ওঠে। মন্দিরের ভেতর একটি ২০ফুটের উঁচু হনুমান শায়িত অবস্থায় আছে।
৮. বিরাট অর্থের মেলা:
বেকারত্ব দেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। সেখানে কুম্ভমেলা, অস্থায়ীভাবে হলেও, অনেক মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা করে দেয়। ২০১৩-র কুম্ভমেলা থেকে জানা গিয়েছে যে মেলা চলার সময় প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ রকমের কাজের ব্যবস্থা হয়েছিল! সেই কাজ করে প্রচুর মানুষের অর্জিত আয়ের পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা!
আপনি কি এই অনন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? তাহলে রেল যাত্রী আছে। আপনাকে একটি নিশ্চিন্ত এবং স্বচ্ছন্দ যাত্রার পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়িত করার জন্য। আমাদের পরিষেবার ব্যবস্থাগুলো দেখুন।