সমুদ্র সৈকত থেকে তাম্বারাম-এর স্থানীয় ট্রেন রুটটি চেন্নাইয়ের জীবনযাত্রার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। মজার বিষয় হলো, এই এক্ক লাইনের মধ্যে, প্রতিটি স্টেশনে এমন ব্যক্তিদের একটি বিশেষ ব্যক্তিত্বকে চিত্রিত করে যারা প্রায়শই ট্রেনে ওঠা/নামা করে এবং আপনি 10 টির মধ্যে 8 জনকে নীচের তালিকাভুক্ত কোন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
চেন্নাই সৈকত: যদি আপনি আনুষ্ঠানিক পোষাক পরিধান করেন, তাহলে আপনি চেন্নাই সৈকত স্টেশনের কাছে অবস্থিত সমস্ত প্রধান ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত ব্যাংকারদের একজন। তবে, যদি আপনি আনুষ্ঠানিক পোষাক পরিহিত না হন, তাহলে আপনি হলেন তথাকথিত ‘উত্তর মাদ্রাজ’এর বাসিন্দাদের মধ্যে একজন, যারা বাইরে থেকে কর্কশ, বিশিষ্ট মাদ্রাজি তামিল ভাষায় কথা বলে এবং সম্ভবত কাজ করার জন্য বা বাজার করার জন্য বার্মা বাজারে যাছে।
চেন্নাই ফোর্ট: এই স্টেশনের ঠিক বিপরীতে চেন্নাই কর্পোরেশনের দপ্তর এবং সেখানকার কর্মীরা তাদের কর্মস্থলে পৌঁছানোর জন্য এই স্টেশনে এসে নামেন। আপনিও যদি সপ্তাহে পাঁচ দিন এই স্টেশনে আসা যাওয়া করে থাকেন, তাহলে আপনিও সরকারী বিভাগের বিশাল জটিলতায় কর্মরত কর্পোরেশনের অনেক কর্মচারীদের মধ্যে একজন হতে পারেন সেই সম্ভাবনা রয়েছে।
পার্ক: আপনি সম্ভবত এই স্টেশনে অফিস ব্যাগ হাতে কম সংখ্যক মানুষ দেখতে পাবেন। পার্ক হলো একটি স্টেশন যেখানে চেন্নাই সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশন থেকে দূর পাল্লার ট্রেন ধরার জন্য লোকজনকে বিপুল ট্রলি এবং ডফেল ব্যাগ নিয়ে দ্রুতগতিতে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। পার্ক হলো চেন্নাই সেন্ট্রালের সংযোগকারী স্টেশন, যেখান থেকে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন ছেড়ে চলে যায়।
এগমোর: এগমোর হলো চেন্নাইয়ের অন্য একটি বড় রেলওয়ে স্টেশন, যা কয়েকটি এক্সপ্রেস ট্রেনের মাধ্যমে রাজধানী শহরকে তামিলনাডুর দক্ষিণাংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে। সেকারণে, এই স্টেশনটিও অফিস ব্যাগ বা ব্রিফকেস এর পরিবর্তে ডফেল ব্যাগ এবং ট্রলি সহ মানুষের জায়গা।
চেতপেট: এটি একটি সমৃদ্ধশালী স্টেশন। চেতপেট এমন একটি এলাকা যেখানে অডি এবং বিএমডব্লিউ সহ চেন্নাই-এর সহ সম্ভ্রান্ত ধনীরা বসবাস করেন। তবে, আপনি প্রতিদিন ট্রেনে যত বিক্রেতা এবং দরিদ্রদের দেখতে পান, তাদের অধিকাংশই রাতের বেলায় চেতপেট প্ল্যাটফর্মের উপর বসবাস করে।
নাংগামবাক্কাম: এই স্টেশনটি হলো চেন্নাইয়ের মধ্যবিত্ত শ্রেণী যারা প্রতিদিন 9টা থেকে 5টা পর্যন্ত কাজ করে, তাদের হৃদয়স্থল। নাংগামবাক্কাম হলো একটি বিশেষ কেন্দ্র যেখান থেকে লোকজন বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স, রেস্টুরেন্ট প্রভৃতির মতো বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে ছুটে যান। এছাড়া, চেন্নাইয়ের লোওলা কলেজটি ঠিক স্টেশনের প্রবেশপথে অবস্থিত এবং সেকারনে অনেক শিক্ষার্থী এই স্টেশনে এসে নামেন।
কোডামবাক্কাম: কোডামবাক্কাম হল সমস্ত উদীয়মান সহকারী পরিচালক, আগামীকালের অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং পর্দার পিছনে থাকা কলাকুশলীদের কেন্দ্রস্থল। এটি হলো স্বপ্নের বীজতলা। যারা এই এলাকায় সাধারনভাবে জীবনযাপন করেন তারাই সম্ভবত তামিল সিনেমার পরবর্তী বড় কিছু হতে পারেন। সুতরাং, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের কিছু সংবাদের কথা বলতে বলতে যারা এই স্টেশনে নামছেন, সেই সমস্ত লোকেদের দেখে বিস্মিত হবেন না।
মাম্বালম: এটি হলো চেন্নাইয়ের প্রিয় শপিং গন্তব্য। টি-নগর হলো এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি চুলের পিন থেকে শুরু করে ঘরোয়া সরঞ্জাম পর্যন্ত সবকিছু কিনতে পারেন। হাজার হাজার লোক এখানে দোকাগুলিতে সেলসম্যানের কাজের জন্য আসে এবং কেনাকাটার উদ্দেশ্য নিয়েও হাজার হাজার লোক আসে। এখানে আপনি দেখবেন যে প্রায় সবাই হাতে করে বড় দোকানের নাম ছাপাই করা কেনাকাটার ব্যাগ বহন করছে।
সাইদাপেট: মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি আকর্ষণীয় আবাসিক এলাকা হলো সাইদাপেট। স্টেশনটি হলো স্টেশন চারপাশের সমস্ত এলাকার আবাসিক এলাকার লোকজনের জন্য একটি কেন্দ্রস্থল। এই স্টেশনের সামনে কিছু সরকারি অফিসও রয়েছে।
গুইন্ডি: গুইন্ডি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট চেন্নাইয়ের ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের জন্য অফিস স্পেসের একটি কেন্দ্রস্থল। এই উৎপাদনকারী কারখানাসমূহের কর্মচারীরা পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে ট্রেন ব্যবহার করে এবং তাদেরকে ছোট শপিং ব্যাগসহ (টিফিনের সাথে) দেখা যায়। গুইন্ডি ডিএলএফ আইটি পার্কেরও নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন, যেখানে বহু আইটি কর্মচারী কাজ করে, তাই কাঁধে ল্যাপটপ ব্যাগ নিয়ে কিছু অত্যাধুনিক পেশাদাররাও এই স্টেশনে ওঠা-নামা করেন।
মীনাম্বক্কাম: বাস্তবে কেউই জানেনা যে কেন এখানে একটি স্টেশন রয়েছে। এয়ারপোর্টটি খুব কাছাকাছি কিন্তু এই স্টেশনটি এয়ারপোর্টের জন্য নয়। স্টেশনের আশেপাশে বড় কোনও একটা আবাসিক এলাকা বা অফিস প্রায় নেই। এই স্টেশনের প্রধান সুবিধাভোগীরা হলো কাছাকাছি অবস্থিত জৈন কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, এবং বিশেষত নিভৃত জায়গার সন্ধানে থাকা প্রেমিক- প্রেমিকারা।
তিরুশুলাম: এটি হলো চেন্নাই বিমান বন্দরের সঙ্গে সংযোগকারী স্টেশন। এখানে আপনি বিভিন্ন লটবহর বা মালপত্রে অসংখ্য এয়ারলাইন ট্যাগ দেখতে পাবেন যা অন্যদের দেখানোর জন্য এখনও খুলে ফেলা ফেলা হয়নি। আপনি এখানে চেন্নাইয়ের বাস্তবতায় হঠাৎ করে চলে আসা কিছু বিমান যাত্রীদেরও দেখতে পাবেন।
পল্লবরম: আরও একটি আবাসিক এলাকা। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ট্রেনের 70 শতাংশ ভিড় পল্লবরমে নেমে যায়। সুতরাং, যদি আপনি একটি খালি আসনের অপেক্ষায় থেকে থাকেন, তাহলে একটি খালি সীট চিহ্নিত করার জন্য এখানে যথেষ্ট সতর্ক থাকুন।
ক্রোমপেট এবং তাম্বারাম স্যানিটোরিয়াম: এটি চেন্নাইয়ের বর্ধিত শপিং মলের গন্তব্য স্থান। এই স্টেশনগুলি নগরের উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশের বাইরে প্রধান আবাসিক এলাকার কেন্দ্রস্থল এবং বিশেষ করে এই স্টেশনগুলিতে সারা দিনের কাজ শেষ করে ঘরে ফেরা মানুষদের বেশি দেখা যায়।
তাম্বারাম: এটি হলো এই বিখ্যাত লোকাল ট্রেন রুটের সর্বশেষ স্টেশন এবং বর্তমানে বর্ধিত চেন্নাই রিয়েল এস্টেট অঞ্চলের প্রারম্ভিক স্টেশন। তাম্বারাম স্টেশনের বাইরে বহু আবাসিক এবং উন্নয়ন প্রকল্প কেন্দ্রীভূত রয়েছে। সেকারণে, অনেক নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এই স্টেশনে ওঠা-নামা করে।